আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত এবং এ মামলায় কারারুদ্ধ যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় শুরু হওয়া এ মানববন্ধন বেলা সাড়ে ১২টায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে শেষ হয়।
মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় আড়াই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এই মামলায় নূরুল ইসলাম সরকারসহ বিএনপির অঙ্গ দলের মোট ৫ জনকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে আহসান উল্লাহ মাস্টার খুন হলেও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশে আওয়ামী লীগ এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে।’ তিনি বলেন, ‘যাদের কারণে আমরা কথা বলতে পারিনি তারা আজ পলাতক। জনগণ তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুরে নিক্ষেপ করেছে। ষড়যন্ত্রের শিকার নূরুল ইসলাম সরকার কারাবন্দী অবস্থায় মারা গেলেও গাজীপুরের মানুষ তাকে চিরকাল মনে রাখবে।’
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার বক্তব্যে বলেন, ‘টঙ্গীর সরকার পরিবার বিগত একশ’ বছরেও খুনের মত ঘৃন্য অপরাধে জড়িত ছিল না। বিগত দিনে জিয়া পরিবারকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপিকে যেমন ধ্বংস করার চক্রান্ত হয়েছে। তেমনি নূরুল ইসলাম সরকারকে আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় জড়িয়ে টঙ্গীর ঐতিহ্যবাহী সরকার পরিবার ও গাজীপুর বিএনপিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে।’
আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় দীর্ঘ প্রায় ১৩ বছর কারাভোগের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া বিএনপি নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু বক্তব্যে বলেন, ‘একমাত্র জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, বিএনপি নেতা সাকা চৌধুরী এবং নূরুল ইসলাম সরকারকেই শোনা কথার সাক্ষীতে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।’
কারারুদ্ধ নুরল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনির কান্না জড়িত আবেগঘন বক্তব্য চলাকালে নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মুহুুর্মুহু শ্লোগানে সমাবেশস্থল প্রকম্পিত হয়। রনি বক্তব্যে বলেন, ‘আবার বাবা নির্দোষ হয়েও দীর্ঘ ২০ বছর কারাগারে। আপনারা আমার পাশে থাকায় বাবার শূন্যতা কখনো অনুভব করিনি। বাবা কারাগারে থাকার পরও বিগত সময় টঙ্গী পৌরসভার নির্বাচনে আপনারা বাবাকে মেয়র নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু আপনাদের সেই বিজয়ও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমার বাবা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বার বার বেঞ্চ পরিবর্তন করে বাদীপক্ষের পছন্দের বেঞ্চে নিয়ে তাকে অন্যায়ভাবে ফরমায়েশি রায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমানে বিচার বিভাগ স্বাধীন; আমার বাবা নিশ্চয়ই ন্যায় বিচার পাবেন।’
নুরুল ইসলাম সরকার মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও প্রভাষক বশির উদ্দিন ও আব্দুর রহিম খান কালার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, একই মামলায় খালাস পাওয়া সাবেক ছাত্রদল নেতা আইয়ুব আলী। উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন কায়সার, মহানগর বিএনপি নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, হুমায়ুন কবির রাজু, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, ইসমাইল শিকদার বসু, শেখ মো. আলেক, নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক সাজেদুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ভাট, যুবদল নেতা সৌমিক সরকার সহ টঙ্গী ও গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গী নোয়াগাঁও স্কুল মাঠে স্বোচ্ছাসেবকলীগের এক সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার পর পরই অনুষ্ঠানমঞ্চে সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন আহসান উল্লাহ মাস্টার।
### আ/হ/১১-০১
আপনার মতামত লিখুন :