সর্বশেষ :

গাজীপুরে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন

ইতিহাসের জঘন্যতম সাজানো মিথ্যা জুডিশিয়াল ট্রাইব্যুনাল দিয়ে আমাদের নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল….. অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার


গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ১০, ২০২৫ । ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ
ইতিহাসের জঘন্যতম সাজানো মিথ্যা জুডিশিয়াল ট্রাইব্যুনাল দিয়ে আমাদের নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল….. অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
বক্তব্য রাখছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

ইতিহাসের জঘন্যতম সাজানো মিথ্যা জুডিশিয়াল ট্রাইব্যুনাল দিয়ে আমাদের নেতাদের হত্যা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার। তিনি শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) গাজীপুর সদর ভবানীপুরে অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে গাজীপুর জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন।

তিনি আরো বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু করেছিলাম তা  ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার ঘটনায়  ম্লান করে দিয়েছিল। সেই ২৮ অক্টোবর থেকে  ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের এদেশীয় দালাল, সেবা দাস চক্ররা এদেশের মসনদে বারবার বসার চেষ্টা করেছে। ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আমরা একটি কালো অধ্যায় পার করেছি। এই সময় আমাদের কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, রাজনৈতিক অধিকার ছিল না, ভোটাধিকার ছিল না, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতিসত্তা পায়ের নিচে পিষে ফেলা হয়েছিল।

গাজীপুর জেলা শাখার আমীর  ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্ৰীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ড. মোঃ সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা  সদস্য মোঃ আবুল হাশেম খান,গাজীপুর মহানগর শাখার আমীর অধ্যাপক মুহাঃ জামাল উদ্দিন, সিনিয়র নায়েবে আমীর মোহাম্মদ আব্দুল হাকীমসহ জেলা উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও জুলাই আগস্ট আন্দোলনে আহত একজন পোষাক কর্মী মুকুল কুমার দত্ত  এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, আমরা একটি কালো যুগ পার করেছি বিগত ১৮টি বছর। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে খুনি সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট সমস্ত গুম, হত্যাকাণ্ড, রিমান্ড, ক্রসফায়ারের মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনার নির্দেশে পল্টনে   লগি বৈঠা দিয়ে আমাদের সাতজন তরুণ নেতাকে  পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মৃতদেহের উপর উঠে ঘৃণ্য উল্লাস করেছিল। আমরা সেই ইতিহাস ছবি ভুলে যাইনি।

তিনি বলেন,  বিগত ফেসিস্ট আমলে অর্থনীতিতে চলেছিল লুটপাট, জুডিশিয়ারি বিচার অঙ্গনে কোন ন্যায় বিচার ছিল না, শাসন ক্ষমতা এই শেখ পরিবার হাসিনার পরিবার এবং আওয়ামী পরিবার সিন্ডিকেট করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। কত মানুষ শহীদ হয়েছে, কত মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ কারা বরণ করেছে। কত শিশু, কত বৃদ্ধ কত মা আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে কান্না করেছে। অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করেছে। আমরা জানি না কোন শহীদ বা  কার হাতকে আল্লাহ কবুল করেছেন ।গত ৫ই আগস্ট আসমান থেকে আল্লাহর রহমতের ধারা বর্ষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এই স্বৈরাচার কত মানুষকে হত্যা করল, কত নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে দিল। বিগত ১৪,১৮,২৪ সালে তিনটা ভোট আমরা দিতে পারিনি। রাজনৈতিক দলের আন্দোলনকে গুম করে, নিষিদ্ধ করে আর নির্যাতন করে বিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়াকে নজির বিহীন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,   আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টের বিদায় দেখেছি। কিন্তু এইভাবে জনতার রুদ্র রুশে কাউকে পালিয়ে যেতে দেখিনি। এত দাম্ভিক এত অহংকারী, এই ১৭,১৮  বছরে উনার মেজাজটা কি ছিল? ওকে মারো, ওকে ধরো, ওকে নিষিদ্ধ কর, ওকে গুলি কর, আয়না ঘরে নাও রিমান্ডে নাও, রাজনৈতিক অধিকার নেই ভোটাধিকার নেই। এত অহংকার এত দাম্ভিকতা আল্লাহতালা  কখনো পছন্দ করে না। আমরা মনে মনে এটা কামনা করতাম নিশ্চয়ই আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত অপেক্ষা করছে।

তিনি আওয়ামী লীগ আমলে জামাত নেতা কর্মীদের উপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের বহু নেতা কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে, তাদেরকে ফাঁসি দিয়েছে। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা বাদী, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা ট্রাইব্যুনাল, মিথ্যা বিচারক, সাজানো রায় দিয়ে ইতিহাসের বর্বরতম জুডিশিয়াল কিলিং করে আমাদের নেতাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে রায় লিখে দেয়া হয়েছে। সেই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে শেখ হাসিনা।

তিনি এখন ভারতে  পালিয়ে গিয়েছেন। সেখান থেকেও  তিনি ষড়যন্ত্র করছেন। একজন আন্তর্জাতিক খুনি ও সব  খুনের মাস্টারমাইন্ড কে সেখানে ভারত  আশ্রয় দিয়ে জেনেভা কনভেনশন এবং সকল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। তাহলে আমরা এটা বলতে বাধ্য, এত বছরের জুলুম নির্যাতন,লুটপাট  খুনের পিছনে তাদেরও হাত ছিল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য ।তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, যে ট্রাইব্যুনাল দিয়েছিল আলেমদেরকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য, আল্লাহর কি বিচার এখন সেই ট্রাইব্যুনালেই তার বিচারের আয়োজন চলছে। ২ শর উপর মামলা হয়ে গেছে ট্রাইবুনালে। রেড এলার্ট জারি হয়েছে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।

জুলাই বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র জনতা জীবন দিয়েছে, ৪০ হাজার ছাত্র-জনতা আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এই যে ত্যাগ, এই যে আত্মদান রক্তদান, যারা চলে গেল তারা তো বিজয় দেখে যেতে পারল না। তাদের স্ত্রী সন্তান শিশুরা কাঁদে, আহতরা হাসপাতালে, বিজয় এই মুক্তির স্বাদ তারা দেখতে পারছে না। যারা আত্মত্যাগ করে গেল তাদের রক্তের এই ঋণ এই ত্যাগ আমাদের শোধ করতে হবে। আমরা সবাই তাদের রক্তের কাছে ঋণী আছি। তা শোধ করার একটাই উপায় তা হচ্ছে, তারা যে ইনসাফপূর্ণ একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য রক্ত দিয়েছিল সেই স্বাধীন, সোনার, সমৃদ্ধ, নিরাপদ, কল্যাণ রাষ্ট্রের বাংলাদেশ আমাদের  গড়তে হবে। তাহলে এই শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করা যাবে। একটি অবাধ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা এই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।

কিন্তু সেখানেও অন্তরায়। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার ঐক্যের চেতনা ছিল, কোন ষড়যন্ত্র কোন লোভ নতুন করে এই অগ্রযাত্রাকে মাঝে মাঝে যেন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

তিনি সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিলাম , নেতৃত্ব দিয়েছি রক্ত দিয়েছি, শহীদ হয়েছি, তাদের কাছে আমার মিনতি জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, এই ঐক্যের আলোকে আসুন এটাকে জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেই সংস্কার টুকু করে আমরা নির্বাচনে যাই।

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১