গাজীপুর-৩ শ্রীপুরের বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের ৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন । তবে, অপর ৪টি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যগণের ওপরেই আস্থা রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই দলীয় প্রার্থী হিসাবে পুনরায় মনোনয়ন পেয়েছেন গাজীপুর ১, ২, ৪ ও ৫ আসনের সংসদ সদস্যগণ।
আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রোববার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে নাম ঘোষণা শুরু করেন।
গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে বিজয়ী হলেন যারা:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা মাঠে সরব থাকলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী শিবিরের চিত্র পুরো উলটো। সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতারা। বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে ভাবনার ফুরসতই যেন পাচ্ছেন না তারা। যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই কেবল তারা ভোটে যাবেন।এদিকে সংসদ নির্বাচন ঘিরে গাজীপুরের ৫টি আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে। তবে বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় পালটে যাবে ভোটের চিত্র।
গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর) : এ আসনে দলীয় ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাড. আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। এ আসনে তিনি ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে বিনা ভোটে এবং ২০১৮ সালেও ফের নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও তিনি এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা অতীতের কোনো সরকারের আমলে হয়নি। আশা করছি সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ভোটাররা এবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে।
মোজাম্মেল হক ছাড়াও কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন। নৌকার মনোনয়ন চাইছেন কালিয়াকৈর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন সিকদার। এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও ২৯টি গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক সেবা সংবলিত নির্বাচনি ইশতেহার প্রচার করে আসছেন নুরে আলম সিদ্দিকী। সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুলও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
গাজীপুর-২ (সদর) : ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এ আসনটি জেলার প্রাণকেন্দ্র ও গুরুত্বপূর্র্ণ। ১৯৯১ সালে বিএনপি এবং ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী সবকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে জয়ী হয়েছে। ২০০৪ সালের ৭ মে শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার নিহত হওয়ার পর থেকে তার ছেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এ আসনের এমপি। এবারও তিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিনও নৌকার মনোনয়ন চাইছেন।
গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও সদরের একাংশ) : শ্রীপুর ও গাজীপুর সদরের মির্জাপুর, ভাওয়ালগড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনে বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনের ছয়টিতেই জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি দুইবার বিএনপি ও দুইবার জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়েছে। এ আসনের বর্তমান এমপি মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ এবারও নৌকার মনোনয়ন চাইছেন। এবার মনোনয়ন পেলেন প্রয়াত ৫ বারের এমপি রহমত আলীর মেয়ে সংরক্ষিত এমপি রুমানা আলী টুসি। এ ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন প্রয়াত ৫ বারের এমপি রহমত আলীর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) : এ আসনটিতে ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। বর্তমান এমপি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও তাজউদ্দীন আহমদের ভাগিনা শিল্পপতি আলম আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান আমানত হোসেন খান ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আরিফ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।
গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ, সিটি ও সদরের একাংশ) : এ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলা ও গাজীপুর সিটির ৩৯-৪২নং ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত এ আসনে বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকী এবারও নৌকার প্রার্থী পেলেন। তিনি ছাড়াও নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন সাবেক এমপি, ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান, কালীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফি মেহেদী হাসান ও গাজীপুর সদর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রফিজ উদ্দিন।
চলতি মাসের ১৫ তারিখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হবিবুল আউয়াল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন।
তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নের আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত এবং ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি।
(অনলাইন সংস্করণ)
আপনার মতামত লিখুন :